মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
মো: ইকবাল। বাড়ি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে। অফিস সহায়ক পদে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অধীনে চাকুরী করছেন। তবে, ইকবাল যেখানেই চাকুরী করেন, সেখানেই সেবা প্রার্থীদের হয়রানীসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেন। উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকসহ স্থানীয় সরকারী অফিসের কাউকেই পরোয়া করেনা ইকবাল! অফিস সহায়ক পদে চাকুরী করলেও নিজেকে একজন ক্ষমতাধর হিসেবে সব সময় জাহির করেন। ইকবালের এহেন বিতর্কিত কর্মকান্ডে অতিষ্ট মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনও! বেপরোয়া এই কর্মচারীর কারণে মাঠ প্রশাসনের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভুমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে ডেপুটেশনে কর্মরত ছিলেন ইকবাল হোসেন। তাকে ২০২০ সালের ২৩ জুন তারিখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাবেক ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর মো.মোস্তাফা জাবেদ কায়সার স্বাক্ষরিত আদেশমুলে উখিয়া উপজেলা ভুমি অফিস থেকে বদলী করা হয় পেকুয়া উপজেলা ভুমি অফিসে। কিন্তু ইকবাল বদলীর ওই আদেশ লঙ্ঘন করে অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভুমি অফিসে বহাল ছিলেন প্রায় ১৬ মাস! এরপর চলতি অক্টোবর মাসে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শুভাশীষ চাকমা স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশমূলে বিতর্কিত কর্মচারী ইকবালকে বদলী করেন পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। একই আদেশে তাকে সংযুক্তি দেওয়া হয় মগনামা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। বদলী আদেশের পর চলতি বছরের অক্টোবরের ২২ তারিখের পূর্বে পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগদান করেন ইকবাল। কিন্তু প্রভাবশালী কর্মচারী ইকবাল প্রেষণে মগনামা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকুরী না করে জেলা প্রশাসনের বদলী আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চাকুরী করছেন তার কর্মস্থল মগনামা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে।
বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আগত কয়েকজন সেবাপ্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ইকবাল নামের কর্মচারী গত তিন সপ্তাহ ধরে ভূমি অফিসে আগত লোকজনকে চরমভাবে হয়রানী করছেন। খতিয়ান তামিলের নামে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে গণহারে ঘুষ আদায় অতিষ্ট করে তুলেছেন।
এ বিষয়ে বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মোহসেনা আক্তার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে কর্মচারী ইকবাল খতিয়ান তামিলের জন্য ভূমি অফিসে আগত কয়েকজন লোকের কাছ থেকে ১হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। তখন আমি তাকে ঘুষ না নিতে বারণ করি। ইকবাল আমার কোন কথাই শুনেনা। তহশিলদার আরো বলেন, ইকবাল এর মূল কর্মস্থল মগনামা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। সেখানে চাকুরী না করে বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এসে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানী করছেন।
এদিকে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসে কী আসলে মধুর হাঁিড় আছে। না হলে বদলী হওয়া নতুন কর্মস্থল মগনামা ইউনিয়ন ভুমি অফিসে চাকুরী না করে ইকবাল কীভাবে বারবাকিয়া ভুমি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই ইকবালের খুঁিটর জোর কোথায় তা নিয়েও। অবশ্য এসব প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে সেই অফিস সহায়ক ইকবাল বর্তমানে বারবাকিয়া ভূমি অফিসে আগত সেবাপ্রার্থীদের অতিষ্ট করে তুলেছেন। এ অফিসে সেবা নিতে আগত লোকজনকে তাঁর কাছে আর্থিকসহ মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সেবাপ্রার্থী মাহামদুল করিম দাবি করেছেন, অফিস সহায়ক ইকবাল সরকারী বিধি লংঘন করে সেবা গ্রহীতাদের জিম্মি করে নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে ভূমি অফিসকে নানা বিতর্কিত করছেন। জমিজমা সংক্রান্ত নানা কাজে আসা সেবা গ্রহীতারা তাঁর নিকট নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মো: ইকবাল এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কর্মস্থল এক জায়গায়, চাকুরী করচেন অন্য যায়গায় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মূল পোস্টিং পেকুয়া সদর ভূমি অফিস ও প্রেষণে মগনামা ভূমি অফিসে। এসিল্যান্ড আমাকে বারবাকিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পদায়ন করেছেন। ডিসি অফিসে আদেশ ছাড়া এসিল্যান্ড পদায়ন করতে পারে কিনা জানতে চাইলে ইকবাল বলেন, এসিল্যান্ডের ক্ষমতাবলে আমাকে বারবাকিয়া ভূমি অফিসে পদায়ন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুম্পা ঘোষ এর সাথে। তিনি বলেন, ডিসি স্যারের সাথে আলাপ করেই পেকুয়া ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক ইকবালকে বারবাকিয়া ভূমি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আদেশ ছাড়া এসিল্যান্ড বদলী করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে আদেশ হবে। সেবাপ্রার্থীদের বারবাকিয়া ভূমি অফিসে হয়রানী করছে ইকবাল এমন প্রশ্ন করা হলে এসিল্যান্ড বলেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
পাঠকের মতামত: